শেয়ার বাজারে অর্থ বিনিয়োগ করার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। এই ব্লগে আপনি জানতে পারবেন বিনিয়োগ করার আগে কী কী তথ্য যাচাই করা উচিত। শেয়ার বাজার থেকে টাকা আয় করা সম্ভব হলেও ঝুঁকি নিয়ে শেয়ার কেনা কতটা নিরাপদ, তা-ও জানতে পারবেন। অর্থ বিনিয়োগ করার সময় ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা ও তা প্রতিরোধে করণীয় নিয়ে বিশদ আলোচনা করা হয়েছে। শেয়ার মার্কেট নিয়ে যারা নতুন, তাদের জন্য সঠিক গাইডলাইন, বিশ্লেষণ এবং শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করার কৌশল তুলে ধরা হয়েছে। বিনিয়োগ করতে হলে শুধুমাত্র লাভের দিক না দেখে বাজার বিশ্লেষণ, কোম্পানির রিপোর্ট ও মূল ঝুঁকিগুলোর দিকে খেয়াল রাখতে হবে। এই ব্লগটি আপনাকে শেয়ার বাজারে সচেতন বিনিয়োগকারী হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়তা করবে। এখনই পড়ুন এবং নিরাপদে ও জেনে-বুঝে বিনিয়োগ শুরু করুন।
শেয়ার বাজার থেকে কিভাবে টাকা আয় করা যায় ?
শেয়ার বাজার কি ? :- শেয়ার বাজার মূলত এমন একটি বাজার যেখানে কোম্পানির শেয়ারগুলি কেনাবেচা হয়। ভারতের প্রধান স্টক এক্সচেঞ্জ হল ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ (NSE) এবং বোম্বে স্টক এক্সচেঞ্জ (BSE)। এইগুলি নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অফ ইন্ডিয়া (SEBI) এর দ্বারা ।
কিভাবে আয় হবে ? :- শেয়ার বাজারে আয়ের প্রধান মাধ্যম হল শেয়ারের মূল্য বৃদ্ধি । অর্থাৎ ধরা যাক কোন শেয়ার আপনি ১০০ টাকায় কিনেছেন। পরবর্তীকালে সেই সেই শেয়ারের দাম বেড়ে গিয়ে হয়েছে ১৫০ টাকা । এক্ষেত্রে আপনি ৫০ টাকা বেশি আয় করলেন । এইভাবে যদি আপনার কাছে ১০০ টা শেয়ার থাকে, তখন আপনার আয়ের পরিমাণ হবে ১০০×৫০= ৫০০০ টাকা । এছাড়াও অন্য একটি মাধ্যম হলো কোম্পানির ডিভিডেন্ট , অর্থাৎ আপনার বিনিয়োগ করা কোম্পানিগুলি বছরের নির্দিষ্ট সময়ে আপনাকে কিছু টাকা প্রদান করে থাকে যা ডিভিডেন্ট নামে পরিচিত।
কত টাকা আয় করা সম্ভব ? :- শেয়ার বাজার থেকে আয় এর পরিমাণ বিশাল, তবে তা নির্ভর করে সঠিক সময় এবং সঠিক কোম্পানিতে বিনিয়োগ করার উপর । ধরা যাক আপনি ১০০০ টাকা বিনিয়োগ করেছেন, সেই টাকা কিছুদিন বা বছর পর দ্বিগুণ বা তিনগুণ পর্যন্ত হতে পারে , তবে এর উল্টো অর্থাৎ আপনার বিনিয়োগের অর্থ কমে যেতেও পারে, যদি আপনার বিনিয়োগ কোম্পানিগুলি ভালো না হয় এবং আপনার সিদ্ধান্ত ঠিক ঠাক না হয়।
কিভাবে শেয়ারবাজারে লাভবান হবেন ? :- শেয়ার বাজারে কোন অর্থ বিনিয়োগ করার আগে সেই কোম্পানির ফান্ডামেন্টাল ও টেকনিক্যাল পর্যবেক্ষণ করতে হবে । আপনার মোট অর্থ একই শেয়ারে বিনিয়োগ না করে, বিভিন্ন সেক্টর অনুযায়ী ভাগ করে বিনিয়োগ করতে হবে । ফলে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটা কমে আসবে । কোন শেয়ারে অর্থ বিনিয়োগ করার পর তা দীর্ঘ সময়ের জন্য ধরে রাখতে হবে অর্থাৎ কম সময়ে বা কয়েক মাসে বিক্রি করা চলবে না ।
বিনিয়োগ করার আগে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় :- শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করার আগে কয়েকটি বিশেষ বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে , যেমন- দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা, বর্তমান পরিস্থিতি , দেশের বর্তমান সরকারের আইন ও নীতি, শেয়ার বাজারের বিগত কয়েক বছরের অবস্থা , এইসব বিষয়গুলির ওপর যথাযথ খেয়াল রাখতে হবে । এছাড়াও ভবিষ্যতে কোন সেক্টরগুলি বেশি বেশি পরিমাণে উন্নত হতে পারে সেই দিকে নজর রেখে বিনিয়োগ করতে হবে,
বিনিয়োগ করতে কি প্রয়োজন ? :- সর্বপ্রথম আপনাকে একটা ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট ওপেন করতে হবে , ডিমেট একাউন্ট ওপেন করার জন্য আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট মোবাইল নাম্বার ও প্যান কার্ড এর প্রয়োজন হবে , এগুলি দিয়ে আপনার কেওয়াইসি সম্পন্ন হলেই আপনি শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করতে পারবেন ।
কম ঝুঁকি নিয়ে শেয়ার মার্কেট থেকে আয়
অল্প ঝুঁকি নিয়ে শেয়ার মার্কেট থেকে আয় করার সবথেকে ভালো উপায় হল, ETF এ ইনভেস্ট করা।
ETF এর পুরো নাম হলো এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড। এই ফান্ড টি মিউচুয়াল ফান্ড এর মতই কিন্তু ETF সাধারণত কোন ইনডেক্সকে ফলো করে। যেহেতু এই ফান্ড গুলি ইনডেক্সকে ফলো করে, তাই ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম।
যেমন নিফটি ফিফটিকে ফলো করে যেসব ফান্ড গুলি, সেখানে যদি ইনভেস্ট করা হয় । তাহলে নিফটি ফিফটি যে পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে, ওই ফান্ড গুলি ঠিক সেই পরিমাণই গ্রোথ করবে ।
গোল্ড ফান্ড গুলি অর্থাৎ যে ইটিএফ গুলি গোল্ড এর ইন্ডেক্সকে ফলো করে । তখন গোল্ডের ইনডেক্স যে পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। ঠিক সেই পরিমাণ ওই ইটিএফ গুলিও বৃদ্ধি পাবে।
আবার একই রকম ভাবে সিলভার বা অন্য কোন সেক্টর ইত্যাদির ক্ষেত্রে। প্রতিটি ইনডেক্স যে পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে বা কমবে ওই ইটিএফ গুলিও ঠিক সেই একই পারফরম্যান্স করবে ।
জনপ্রিয় কিছু ETF উদাহরণ
1. Nippon India Nifty 50 ETF
2. SBI ETF Nifty 50
3. SBI ETF Gold
4. Motilal Oswal Nasdaq 100 ETF
5. Nippon India ETF PSU Bank BeES
6. HDFC Sensex ETF
7. Nippon India ETF Nifty Next 50 Junior BeES
বিনিয়োগ করার আগে যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে
Expense Ratio: যত কম হবে ততই ভালো ।
AUM (Asset Under Management): বেশি AUM মানে বেশি জনপ্রিয়তা। এই বিষয়টি অবশ্যই লক্ষ্য করা উচিত।
Tracking Error: কম Tracking Error থাকা ভালো ।
Liquidity: প্রতিদিন কেনাবেচা সহজ হচ্ছে কিনা দেখুন। অর্থাৎ আপনাকে লিকিউরিটি চেক করতে হবে।
বিশেষ দ্রষ্টব্য :- এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য উৎসাহ করা হয়নি। এই প্রতিবেদনটি শুধুমাত্র শেয়ার বাজার সম্পর্কে তথ্য ও শিক্ষা দেওয়ার জন্য করা হয়েছে। আমরা কোন সেবি রেজিস্টার অ্যাডভাইজার না । একটি কথা খেয়াল রাখবেন শেয়ার বাজার সর্বদাই ঝুঁকিপূর্ণ ।
Thank you for your Valuable Time