প্রাকৃতিকভাবে কিভাবে স্মৃতি বাড়ানো যায়, স্মৃতিশক্তি দুর্বল হওয়ার কারণ ও সমাধান( increase Memory Power) জানুন।কোন খাবার ও ফল মস্তিষ্কের(Brain Memory) জন্য উপকারী, এবং (Study)পড়াশোনা বা কাজে মনোযোগ ধরে রাখার সহজ কৌশল শিখুন।
আজকের ব্যস্ততা ভরা জীবনে স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে যাওয়া একটি সাধারণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পড়াশোনা, অফিসের কাজ বা দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন বিষয় মনে রাখতে অনেকেই সমস্যায় পড়েন। তবে কিছু সহজ ও প্রাকৃতিক উপায় অনুসরণ করে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করা সম্ভব।
স্মৃতিশক্তি কী ?
উত্তর:- স্মৃতিশক্তি হলো মস্তিষ্কের তথ্য সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধার করার ক্ষমতা ।
স্মৃতিশক্তি দুর্বল হওয়ার প্রধান কারণগুলি
১.অতিরিক্ত মানসিক চাপ - কর্টিসল হরমোনের প্রভাবে মস্তিষ্কের স্মৃতি কেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হয় ও দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ হিপোক্যাম্পাসকে ক্ষতিগ্রস্ত করে ।
২.অনিদ্রা - প্রতিদিন পর্যাপ্ত ও গভীর ঘুম না হলে মস্তিষ্কের কোষগুলিকে পুনরুদ্ধার হতে দেয় না। এছাড়াও মস্তিষ্ক শেখা তথ্য সঠিকভাবে সংরক্ষণ করতে পারে না।
৩.পুষ্টির অভাব - ভিটামিন বি১২, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের অভাব মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়।
৪.মোবাইল ও ইন্টারনেটের অতিরিক্ত ব্যবহার - তথ্য সহজে পাওয়ার কারণে মস্তিষ্কের স্মৃতিশক্তি ব্যবহার কমে যায়। দীর্ঘ সময় মোবাইল ও ইন্টারনেট ব্যবহার করলে মনোযোগ কমে যায় এবং মস্তিষ্কে তথ্য ধরে রাখার ক্ষমতা হ্রাস পায়।
৫.শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা - রক্ত সঞ্চালন কমে গেলে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা হ্রাস পায়।
৬.বয়সজনিত পরিবর্তন -
বয়স বৃদ্ধি হওয়ার ফলে প্রাকৃতিকভাবে কিছু স্মৃতি হারানো স্বাভাবিক, তবে সঠিক যত্ন না নিলে তা দ্রুত হয়।
প্রাকৃতিকভাবে স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর উপায়(increase memory power in naturally)
১. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস
মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়াতে পুষ্টিকর খাবার অপরিহার্য। নিচে কিছু তালিকা দেওয়া রইল ।
বাদাম ও আখরোট - ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ও ভিটামিন ই সমৃদ্ধ, যা স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে ।
ডার্ক চকোলেট - ফ্ল্যাভোনয়েডস মস্তিষ্কের রক্ত প্রবাহ উন্নত করে।
হলুদ - কার্কুমিন মস্তিষ্কের প্রদাহ কমায় এবং স্মৃতিশক্তি বাড়ায়।
মাছ - স্যালমন, টুনা ইত্যাদিতে ওমেগা-৩ রয়েছে, যা মস্তিষ্কের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
ডিম - কোলিন নামক উপাদান মস্তিষ্কের কোষ গঠনে সাহায্য করে।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট - ব্লুবেরি, আঙুর, গাজর, পালং শাক, টমেটো মস্তিষ্ককে সুরক্ষা দেয় ।
২. পর্যাপ্ত ঘুম
ঘুম মস্তিষ্কের কার্যকারিতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে মস্তিষ্ক সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না এবং স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে।
কমপক্ষে প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম জরুরি।
একই সময়ে শোয়া ও ওঠার অভ্যাস করুন।
ঘুমানোর আগে মোবাইল, কম্পিউটার বা টিভি ব্যবহার কমিয়ে দিন।
গবেষণায় দেখা গেছে, ঘুমের সময় মস্তিষ্ক দিনের শেখা তথ্যগুলো সংরক্ষণ করে। তাই ভালো ঘুম স্মৃতিশক্তি বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।
৩. নিয়মিত ব্যায়াম ও শারীরিক কার্যকলাপ
শারীরিক ব্যায়াম শুধু শরীরের জন্যই ভালো নয়, এটি মস্তিষ্কের জন্যও উপকারী। ব্যায়াম করলে মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায়, যা স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা চলা বা দৌড় ও
সাইকেল চালানো বা যোগব্যায়াম করুন
খেলাধুলা বা নাচের মতো কার্যক্রমে অংশ নিন ।
৪. মস্তিষ্কের ব্যায়াম
শরীরের মতো মস্তিষ্কেরও ব্যায়াম দরকার।মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখতে কিছু মজার ব্রেন গেমস খেলতে পারেন ।
পাজল, সুডোকু, দাবা খেলুন।
নতুন ভাষা শেখা বা বাদ্যযন্ত্র বাজানো চেষ্টা করুন।
প্রতিদিন বই পড়ার অভ্যাস করুন।
৫. পড়ার কৌশল পরিবর্তন করতে হবে ( ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য)
• পড়ার সময় নোট তৈরি করুন।
• “স্পেসড রিপিটিশন” পদ্ধতিতে বারবার রিভিশন দিন। পড়া শেষ করে বই বন্ধ করে নিজেকে প্রশ্ন করুন। এটি তথ্য দীর্ঘস্থায়ীভাবে মনে রাখতে সাহায্য করে । একদিন পড়ার পর কিছুদিন পর আবার রিভিশন দিন। এটি মস্তিষ্কে তথ্য স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করে ।
• একাধিক কাজ না করে এক সময়ে একটিমাত্র কাজে মন দিন।
• নির্দিষ্ট রুটিন মেনে চলতে হবে ।
• প্রতিদিন একই সময়ে পড়ার অভ্যাস করুন।
• পড়ার সময় ফোন বা সামাজিক মাধ্যম থেকে দূরে থাকুন ।
অন্যান্য প্রতিবেদন গুলি পড়ুন Click 👇
৬. নতুন কিছু শিখুন
• পেইন্টিং বা হস্তশিল্প তৈরি করুন ।
• নতুন নতুন কোনো ভাষা শেখার চেষ্টা করুন ।
• গান শুনুন বা গান গাইুন।
• প্রিয় বই পড়ুন অথবা প্রিয় সিনেমা দেখুন ।
• বন্ধু ও পরিবারের সাথে সময় কাটান ।
ইতিবাচক চিন্তা করুন ।
৭. ক্ষতিকর অভ্যাস এড়ানো
ক্ষতিকারক অভ্যাসগুলি যেমন-:ধূমপান, অতিরিক্ত চা-কফি ও জাঙ্ক ফুড কমিয়ে দিন।অ্যালকোহল থেকে দূরে থাকুন। চা বা কফির বদলে বেশি করে জল পান করার অভ্যাস করুন ।
স্মৃতিশক্তি বাড়ানো কোনো কঠিন কাজ নয়। কিছু প্রাকৃতিক ও সহজ পদ্ধতি অনুসরণ করে যে কেউ নিজের স্মৃতিশক্তি উন্নত করতে পারে। পর্যাপ্ত ঘুম, স্বাস্থ্যকর খাবার, ব্যায়াম, মেডিটেশন এবং সঠিক পড়াশোনার পদ্ধতি মেনে চললে দ্রুত ফলাফল পাওয়া যাবে। মনে রাখবেন, এটি একদিনে সম্ভব নয়; ধৈর্য ও নিয়মিত অনুশীলনের মাধ্যমেই সাফল্য আসবে।